রাজশাহী জেলার নামকরণের ইতিহাস

রাজশাহী জেলা
রাজশাহী জেলা
রাজশাহী জেলা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি জেলা। এই জেলাটি রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত। অবস্থানগত কারণে এটি বাংলাদেশের একটি বিশেষ শ্রেণীভুক্ত জেলা।

অবস্থান ও আয়তনঃ

রাজশাহী জেলার উত্তরে নওগাঁ জেলা, দক্ষিণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, কুষ্টিয়া জেলা ও পদ্মা নদী, পূর্বে নাটোর জেলা, পশ্চিমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। দেশের প্রধানতম নদী পদ্মা এই জেলার সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই জেলার মোট আয়তন ২৪০৭.০১ বর্গকিলোমিটার।

নামকরণ ইতিহাসঃ

এই জেলার নামকরণ নিয়ে প্রচুর মতপার্থক্য রয়েছে। তবে ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়র মতে রাজশাহী রাণী ভবানীর দেয়া নাম। অবশ্য মিঃ গ্রান্ট লিখেছেন যে, রাণী ভবানীর জমিদারীকেই রাজশাহী বলা হতো এবং এই চাকলার বন্দোবস্তের কালে রাজশাহী নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। পদ্মার উত্তরাঞ্চল বিস্তীর্ন এলাকা নিয়ে পাবনা পেরিয়ে ঢাকা পর্যন্ত এমনকি নদীয়া, যশোর, বর্ধমান, বীরভূম নিয়ে এই এলাকা রাজশাহী চাকলা নামে অভিহিত হয়। অনুমান করা হয় ‘রামপুর’ এবং ‘বোয়ালিয়া’ নামক দু’টি গ্রামের সমন্বয়ে রাজশাহী শহর গ’ড়ে উঠেছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে ‘রামপুর-বোয়ালিয়া’ নামে অভিহিত হলেও পরবর্তীকালে রাজশাহী নামটিই সর্ব সাধারণের নিকট সমধিক পরিচিতি লাভ করে। বর্তমানে আমরা যে রাজশাহী শহরের সঙ্গে পরিচিত, তার আরম্ভ ১৮২৫ সাল থেকে।তার আগে রাজশাহী জেলার সদরদপ্তর ছিল বর্তমান নাটোর শহর এলাকায়।নারদ নদের নাব্য সংকটের কারণে তৎকালীন রামপুর-বোয়ালিয়া পদ্মানদীর তীরবর্তী এলাকায় রাজশাহীর সদর ও প্রসাশনিক এলাকা ব্রিটিশরা স্থাপন করেন।
রাজাশাহী শব্দটি বিশ্লেষণ করলে দুটি ভিন্ন ভাষার একই অর্থবোধক দুটি শব্দের সংযোজন পরিলতি হয়। সংস্কৃত ‘রাজ’ ও ফারসি ‘শাহ’ এর বিশেষণ ‘শাহী’ শব্দযোগে ‘রাজশাহী’ শব্দের উদ্ভব, যার অর্থ একই অর্থাৎ রাজা বা রাজা-রাজকীয় বা বাদশাহ বা বাদশাহী। তবে বাংলা ভাষায় আমরা একই অর্থের অনেক শব্দ দু-বার উচ্চারণ করে থাকি। যেমন শাক-সবজি, চালাক-চতুর, ভুল-ভ্রান্তি, ভুল-ত্র“টি, চাষ-আবাদ, জমি-জিরাত, ধার-দেনা, শিক্ষা-দীক্ষা, দীন-দুঃখী, ঘষা-মাজা, মান-সম্মান, দান-খয়রাত, পাহাড়-পর্বত, পাকা-পোক্ত, বিপদ-আপদ ইত্যাদি। ঠিক তেমনি করে অদ্ভুত ধরনের এই রাজশাহী শব্দের উদ্ভবও যে এভাবে ঘটে থাকতে পারে তা মোটেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। এই নামকরণ নিয়ে অনেক কল্পকাহিনীও রয়েছে। সাধারণভাবে বলা হয় এই জেলায় বহু রাজা-জমিদারের বসবাস, এজন্য এ জেলার নাম হয়েছে রাজশাহী। কেউ বলেন রাজা গণেশের সময় (১৪১৪-১৪১৮) রাজশাহী নামের উদ্ভব। ১৯৮৪ সালে রাজশাহীর ৪ টি মহকুমাকে নিয়ে রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর এবং নবাবগঞ্জ- এই চারটি স্বতন্ত্র জেলায় উন্নীত করা হয়।

শিক্ষাব্যবস্থাঃ

রাজশাহীতে একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, একাধিক ঐতিহ্যবাহী কলেজ (রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী নিউ গভঃ ডিগ্রী কলেজ, রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ, রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ), কারিগরী মহাবিদ্যালয়,একটি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট,একটি ক্যাডেট কলেজ,দুইটি সরকারী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সহ আরও অসংখ্য সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
See also  রাজশাহী জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য

You may also like...